অর্থনীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ন সম্পর্ক রয়েছে। মুদ্রানীতির মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র তার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে। ঠিক যেমন রাখালের বুনো ষাঁড়কে দড়ি দিয়ে বেধে রাখার চেষ্টা।
বাংলাদেশে এখন মুদ্রাস্ফীতি চরম পর্যায়ে। এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে এই বনো ষাঁড়কে নিয়ন্ত্রন করা একজন জির্নশীর্ণ রাখালের কাছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন।
আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে অর্থনৈতীক বৈষম্য অনেক বেশী, একজনের পকেটে অঢেল সম্পদ অন্য জনের পকেটে দিন আনে দিন খায় অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে মুদ্রাস্ফীতি আরো চরমভাবে আঘাত করবে।
চাহিদা ও যোগানের মধ্যেই এই অর্থনীতির খেলা। ধরুন ডিমের ডজন ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা সেটা হঠাৎ করে ১৫০ টাকা হয়ে গেল। সকলের পকেটে যদি সমান পরিমান টাকা থাকত তাহলে হয়ত সকলের জন্যই এটি ক্রয়করা কষ্টকর হয়ে যেত। বিক্রয় বন্ধ হয়ে গেলে চাহিদা কমে যেত, ব্যবসায়ী বাধ্য হত দাম কমিয়ে দিতে। কিন্তু এখন একজনের পকেটে অনেক টাকা অন্যজনের পকেটে টাকা নেই। কাজেই একজন না কিনতে পারলেও অন্যজন ঠিকই কিনে নিচ্ছে।
ফলাফল একজন কিনতে না পেরে দুর্ভিক্ষে পতিত হতে হবে, অন্যজন ঠিকই জীবনযাপন করতে পারবে।
মুদ্রাস্ফীতির সবথেকে বড় সমস্যা এটি মানুষের মনস্তাত্বিক ব্যাপারের সাথে সরাসরি কানেকশন তৈরী করে মুদ্রাস্ফীতিকে আরো চরম পর্যায়ে নিয়ে যায়।
আজ যে জিনিসটি আপনি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে পাচ্ছেন দ্রুত টাকার মান কমার ফলে আগামীতে এই জিনিসটি আপনাকে হয়ত ৭০হাজার বা তারও বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হবে। টাকা যদি জমিয়ে রাখেন তাহলে আপনা আপনি মান কমে যাবে। তার থেকে যদি জিনিসটি কিনে নেন, সেটি আপনাকে সঠিক ভ্যালু দিবে, এই লসের কবল হতে বেশি সুরক্ষা দিবে।
একই পরিমান টাকা দিয়ে বর্তমানে যত আয়েস করতে পারবেন, ভবিষ্যতে সেটা সম্ভব হবে না। তাই টাকা না জমিয়ে খরচ করাই ভাল।
একারনেই টাকা ওয়ালা মানুষ এ সময়ে বেশি বেশি টাকা খরচ করবে। যখনই বেশি কেনা কাটা করবে চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে। চাহিদা বৃদ্ধি পেলে জিনিসপত্রের দাম আরো বেড়ে যাবে। এটা একজন গরিবকে আরো হতাসা ও বিপদগ্রস্থ করবে। তার ক্রয় ক্ষমতাকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যাবে।
এ জন্য একটি দেশ যদি তার নাগরীকদের একটি নির্দিষ্ট ক্যাপ দিয়ে দেয়, যে এর বেশী সে সম্পদ তৈরী করতে পারবেনা অথবা আয়কর ব্যবস্থা-কে এমনভাবে সাজানো হয় যাতে ধনী গরীবের সমতা রক্ষা পায় তাহলে মুদ্রাস্ফীতি আপনাআপনি-ই নিয়ন্ত্রন হয়ে যেত।
বঙ্গবন্ধুর বাকশাল ছাড়া বাংলাদেশে যত সরকার-ই ছিল সকলেই গনতন্ত্রের নামে নিজেদের আখেড় গুছিয়েছে। আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুর বাকশাল-ই ছিল একটি সত্যিকার অর্থের কল্যানকর গনতন্ত্র।
কিন্তু সেই গনতন্ত্র রাঘববোয়ালদের পছন্ধ হওয়ার কোন কারন-ই নেই। খুব ভালভাবে যদি বাকশালের কনসেপ্টগুলো স্টাডি করেন, সেটি ছিল কৃষক শ্রমিকদের কষ্টকর জীবন যাপন ও তথাকথীত শিক্ষিত রাঘববোয়ালদের দুর্নীতির আখড়ার মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার অবস্থাকে দুর করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি।
এই কৃষক শ্রমীক-রা নিয়ন্ত্রিত হয় রাঘব বোয়ালদের দ্বারা। এরা ভাল ভাবে বুঝেও না কিসে তাদের ভাল আর কিসে তাদের মন্দ। বাকশাল এমন একটি ব্যবস্থা যা ছিল রাঘব বোয়ালদের জন্য ক্ষতিকর ও কৃষক শ্রমিকদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ন জীবন ব্যবস্থা।
অর্থনীতি হচ্ছে একটি বিষয় যা যুক্তিকে সংশ্লেষাংক পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করে। ইহার লক্ষ্য বস্তুতে তত্ত্ব প্রস্তুতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা অন্যান্য তত্ত্ব থেকে ব্যাখ্যা করা সহজ, অধিক ফলদায়ক এবং দক্ষতাপূর্ন হতে হবে। কখনও কখনও চলক সমূহের সম্পর্ক ব্যাখ্যার জন্য সাধারণ পদ্ধতিতে বিশ্লেষন আরম্ভ করা হয়।
মুদ্রানীতি হল একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত নীতি যা দেশের অর্থনীতিতে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। মুদ্রানীতি দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সুদের হার এবং অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
Md Abdur Razzaq MBA, ACCA, ITP